Probondho Rochona : Doyar Sagor Robindronath Thakur , Mathar Teresa, Sotyendronath Tagore
সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে Info Educations এ স্বাগতম। আজ তোমাদের জন্য Info Educations নিয়ে এসেছে দয়ার সাগর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,সমাজসেবী মাদার টেরিসা ও বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু তিনটি প্রবন্ধ রচনা একসাথে। প্রবন্ধ রচনা বিভিন্নভাবে তোমাদের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক , অষ্টম শ্রেণী ,নবম শ্রেণী ,দশম শ্রেণী, এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এসে থাকে প্রতিবছর। প্রবন্ধ রচনার গুরুত্ব তাই তোমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রবন্ধ নিজের মতো করে গুছিয়ে লিখতে পারলে তোমরা পরীক্ষায় ভালো নম্বর অবশ্যই পাবে।
মাধ্যমিক প্রবন্ধ রচনা সাজেশন 2025। প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম
১. প্রবন্ধের ভূমিকা: প্রবন্ধের শুরুতে বিষয়টি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করতে হবে।
২. মূল অংশের বিন্যাস: প্রবন্ধের মূল অংশে বিষয়বস্তুকে কয়েকটি অনুচ্ছেদে ভাগ করে সুনির্দিষ্ট তথ্য, যুক্তি ও উদাহরণ দিয়ে আলোচনা করা উচিত।
৩. বাক্যের সরলতা: প্রবন্ধে সংক্ষিপ্ত, পরিষ্কার ও প্রাঞ্জল ভাষার ব্যবহার করা উচিত যাতে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হয়।
৪. উপসংহার: প্রবন্ধের শেষে সারাংশ তুলে ধরে বিষয়টি সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা বার্তা দিতে হবে।
৫. সঠিক বানান ও ব্যাকরণ: প্রবন্ধে বানান ও ব্যাকরণগত ভুল এড়িয়ে শুদ্ধভাবে লেখার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
দয়ার সাগর : বিদ্যাসাগর । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী রচনা / Ishwar Chandra Vidyasagar Rachana / ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো / বাংলা গদ্য সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর : -
ভূমিকা : - ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাণপুরুষ, বীরসিংহের সিংহশিশু বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা গদ্যের জনক ও বাঙালি জীবনের স্মারক। দরিদ্র পরিবারে জন্মে, দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটিয়েও বিদ্যাসাগর বাঙালি জাতিকে শিখিয়েছেন আত্মবিশ্বাস, কর্ম ও নিষ্ঠার জোরে এক বড় ব্যক্তিত্বশালী পুরুষ হওয়া যায়। সেজন্য রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “অনেক মহৈশ্বর্যশালী রাজা রায় বাহাদুর প্রচুর ক্ষমতা লইয়া যে উপাধি লাভ করিতে পারে নাই, এই দরিদ্র সন্তান সেই 'দয়ার সাগর' নামে বঙ্গদেশে চিরদিনের জন্য বিখ্যাত হইয়া রহিলেন।”
চারিত্রিক গুণাবলী: - ঈশ্বরচন্দ্র যে যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে যুগ ছিল - "Age of reason and rights of man"-এর, কুসংস্কারের অচলায়তনে বাঙালি সমাজ যখন বদ্ধ, শাস্ত্রীয় নিয়মের দোহাই দিয়ে কিছু তথাকথিত সমাজপতি যখন সমাজের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, তখন বিদ্যাসাগর একক চেষ্টায় সেই অচলায়তনের প্রাচীরকে যুক্তির দ্বারা ভেঙে ফেলে মানবত্বের জয় ঘোষণা করলেন।
জন্ম, বংশ পরিচয় ও শিক্ষা: - পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে ঈশ্বরচন্দ্রের জন্ম (১৮২০, ২৬শে সেপ্টেম্বর)। মাতা ভগবতী দেবী ও পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুযোগ্য সন্তান ছিল বিদ্যাসাগর। গ্রামের পাঠশালায় তাঁর প্রথম শিক্ষা শুরু। এর পর পিতার সঙ্গে পায়ে হেঁটে আসেন কলকাতায় এবং আসার পথে মাইলপোষ্টের সংখ্যা গুণে গুণে গণিতের পাঠ গ্রহণ করেন। কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে তিনি ভর্তি হন। প্রচণ্ড দারিদ্র্যের মধ্যে থেকে, নিজের হাতে রান্নাবান্না করে, রাস্তায় গ্যাসের লাইটে দাঁড়িয়ে ক্লাসের পড়া করে অতিকষ্টে তিনি বিদ্যাশিক্ষা করেন।
শিক্ষা সংস্কার: - ঈশ্বরচন্দ্র বাঙালি জাতিকে অশিক্ষার তমসা থেকে জ্যোতির্ময় আলোকে আনতে চেয়েছিলেন। জাতিকে তিনি যুক্তি ও বিচারবোধে উদ্দীপ্ত করতে চেয়েছিলেন। সেজন্য প্রয়োজন ছিল উপযুক্ত শিক্ষার। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি প্রয়াসী হয়েছিলেন। তিনি বয়স্ক স্কুল, ১০১টি বঙ্গ বিদ্যালয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেন।
সাহিত্যকীর্তি: - বাংলা গদ্যের যথার্থ শিল্পী ছিলেন তিনি, এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন উপযোগবাদী। তাঁর সাহিত্য চর্চাকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়—(১) অনুবাদমূলক‘সীতার বনবাস, সাহিত্যকীর্তি ‘শকুন্তলা’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’ ইত্যাদি। (২) শিক্ষামূলক—‘বর্ণপরিচয়','বোধোদয়', 'কথামালা' ইত্যাদি। (৩) সমাজসংস্কার মূলক - বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব' ইত্যাদি। (৪) লঘু রচনা— 'অতি অল্প হইল’, ‘আবার অতি অল্প হইল' ইত্যাদি। (৫) মৌলিক রচনা—প্রভাবতী সম্ভাষণ (বন্ধু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র কন্যার মৃত্যুতে রচিত)। এককথায়, বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা গদ্যের জনক।
সমাজ সংস্কার : - প্রাতঃস্মরণীয়, ক্ষণজন্মা পুরুষ বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তুলনারহিত। তাঁর অকৃত্রিম হৃদয়বৃত্তি ও মানবতাবোধ তাঁকে সমাজ-সংস্কারে উদ্দীপিত করেছিল। মধু কবি তাই লিখেছিলেন—"The man to whom I appealed has the genius and wisdom of an ancient sage, energy of an Englishman and the heart of a Bengalee mother."
নারিমুক্তির প্রয়াস: - মাতা ভগবতীর প্রতি শ্রদ্ধা-ই তাকে নারীমুক্তি আন্দোলনে নিয়োজিত করেছিল। রামমোহন সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নারীজাতির প্রতি যে শ্রদ্ধা দেখিয়েছিলেন, বিদ্যাসাগর সেই পথেই বিধবা আন্দোলন শুরু করেছিলেন—শাস্ত্রীয় নিয়মের দোহাই দিয়ে বিধবা বিবাহ আন্দোলনকে বন্ধ করতে যারা চেয়েছিলেন বিদ্যাসাগর সেই শাস্ত্র দিয়েই তৎকালীন সমাজপতিদের বোঝাতে চেয়েছিলেন—বিধবা বিবাহ শাস্ত্রসম্মত।
জাতীয়তাবোধ: - বর্তমান মেরুদণ্ডহীন বাঙালি জাতির কাছে বিদ্যাসাগর ছিলেন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন স্বদেশপ্রেমিক। জাতির ও দেশের কল্যাণে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। সিপাহী বিদ্রোহ দমন করার জন্য ইংরেজরা সংস্কৃত কলেজে অস্থায়ী আস্তানা স্থাপন করতে চাইলে বিদ্যাসাগর তার প্রতিবাদ করেন। জাতীয় কংগ্রেসকে তিনি সশস্ত্র আন্দোলনে রূপায়িত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। মা ও মাটির প্রতি তাঁর টান ছিল সহজাত।
মানবিকতাবোধ: - তিনি শুধু বিদ্যার সাগরই ছিলেন না, তিনি দয়ার সাগর, করুণার সাগর। শ্রীরামকৃষ্ম তাকে 'দয়ার সাগর'ই বলতেন। পরদুঃখকাতরতা তাঁকে দীন দুঃখীর চোখের জল মোছাতে | সচেষ্ট করেছিল। মায়ের কথাতেই তিনি গ্রামের মানুষের জন্য অন্নসত্র খুলেছিলেন, শীতার্ত মানুষকে গরম বস্ত্র দান করতেন। বহু দাতব্য চিকিৎসালয়ও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রবাসী কবি মধুসূদনকে চরম আর্থিক অনটনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন তিনি।
একালেও বিদ্যাসাগরের চারিত্রিক গুণাবলী আমাদের একমাত্র আদর্শস্থল। সেজন্য নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন—“আজকের বাঙালির পক্ষে সবচেয়ে বেশী দরকার হলো, সেই টিকিওয়ালা বাঙালি ইংরেজকে আমাদের প্রতিদিনকার
উপসংহার: - জীবনের ক্ষেত্রে জ্যান্ত করে তোলা।” মধু কবিও তাই নিজের জীবনে উপলব্ধি করেছিলেন বিদ্যাসাগরের দয়া দাক্ষিণ্য। তাই তিনি গেয়ে উঠেছিলেন— “বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে, দীন যে, দীনের বন্ধু।' এ কোন উচ্ছ্বাস নয়, বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে তাঁর যথার্থ মূল্যায়ন।
Hint: - নবজাগরণের একজন শ্রেষ্ঠ ঋত্বিক / তোমার প্রিয় মহাপুরুষ/সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগর/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবন ও সাধনা।
মাদার তেরেসার সংক্ষিপ্ত জীবনী। মাদার তেরেসা রচনা। মাদার টেরিজা প্রবন্ধ রচনা
মাদার টেরেজা : সেবাধর্মের প্রতীক । মাদার তেরেসা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
ভূমিকা: - পথবাসী থেকে প্রাসাদের মানুষ সকলের কাছে মাদার চিরদিনের জন্য কলকাতা বিশ্ব থেকে বিদায় নিয়েছেন। রেখে গেছেন তাঁর কার্তিকে, সেবাধর্মকে, মমত্ববোধকে এবং সর্বোপরি অনন্য মনুষ্যত্বকে। যার দ্বারা শ্রেণি-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের হৃদয়রাজ্যে তিনি স্থান করে নিতে পেরেছিলেন।
জন্ম ও বাল্য পরিচয়: - এই জননী জন্মেছিলেন, ১৯১০ সালের ২৭শে আগস্ট (মতান্তরে ২৮শে আগস্ট) যুগোশ্লাভিয়ার স্কোপেজ শহরের এক কৃষক পরিবারে। তার প্রকৃত নাম অ্যাগনেস গোনক্সহা বেজাস্কিহিউ। মা-বাবা জাতিতে ছিলেন আলবেনিয়ান। টেরেজার যখন মাত্র সাত বৎসর বয়স তখন তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন তখন সরকারি স্কুলের ছাত্রী। স্কুলে পড়ার সময়েই কিশোরী টেরেজা সেবাব্রতে দীক্ষিত হন। তাঁর বয়স তখন বারো। সেই সময়ে যুগোশ্লাভিয়ার জেসুইটরা 'ক্যালকাটা আরচ্ ডায়পসেসে' কাজ নিতে সম্মত হয়। তরুণী অ্যাগনেস এতে নূতনভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতে আসতে চাইলেন। তাঁর আগ্রহ দেখে তাঁকে আয়ারল্যাণ্ডের লরেটো সন্ন্যাসিনীদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়।
কর্মজীবন : - ১৯২৮ সালে মা, ভাই, বোন, আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে ডাবলিনে এলেন অ্যাগনেস। সেখানে ক্যাথলিক ধর্মমত গ্রহণ করলেন সন্ন্যাসিনীর মহান ব্রত। সেখান থেকে তিনি ভারতবর্ষে এসেই প্রথমে চলে যান দার্জিলিং-এ। তারপর সেই বছরই শিক্ষকতার কাজ নিয়ে কলকাতা চলে আসেন টেরেজা। মতিঝিল বস্তির দুঃস্থ ও দুর্গত মানুষদের দেখে | তিনি কলকাতার দারিদ্র্যের স্বরূপ আবিষ্কার করেন। গভীর আত্মবিশ্বাস আর স্নেহ-ভালোবাসা ও সহানুভূতিকে মূলধন করে আত্মনিয়োগ করলেন সেবাব্রতে–এ এক সম্পূর্ণ নতুন জীবন।
বিশ্বব্যাপী সেবা সাম্রাজ্য: - দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে মাদার টেরেজা প্রতিষ্ঠিত এই সেবা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং পরিচালিত হচ্ছে একশত অবৈতনিক বিদ্যালয়, প্রায় পাঁচশটি স্থানীয় ও ভ্রাম্যমান চিকিৎসা কেন্দ্র, আটান্নটি কুষ্ঠাশ্রম, অনাথ ও প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে 'নির্মল হৃদয়' নামে দর্শনীয় সেবা প্রতিষ্ঠান। শিশুদের জন্য পঁচিশটি হোম। এছাড়া কলকাতার কালীঘাটে মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান। এখানে লক্ষ লক্ষ মুমূর্ষু মানুষ পেয়েছে মায়ের হাতের অমৃতময় স্পর্শ। সেই সঙ্গে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুদের জন্য ‘নির্মলা শিশু ভবন'।
বিশ্বের ঘরে ঘরে মাদারের ভান্ডার : - টেরেজা এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বিশ্বব্যাপী মানুষের সাগ্রহ দানে। একজন ভিক্ষুকের কাছ থেকেও সাগ্রহে দান গ্রহণ করেছেন। মাদার টেরেজা প্রমাণ করেছেন, এই স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক জগতে তিনি এক ব্যতিক্রম। বিশ্বজুড়ে যেখানে স্বার্থে-স্বার্থে সংঘাত, বিদ্বেষ আর হানাহানি সেখানে দিতে। মাদার টেরেজা তাঁর নিজের মাতৃহৃদয় দিয়ে প্রমাণ করেছেন, হিংসা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব মানুষের হৃদয়ই পারে এই বর্তমান থেকে মানুষের হৃদয়ধর্ম ও মনুষ্যত্ববোধ অনেক ঊর্ধ্বে। তাই টেরেজার সেবা, শান্তি ও করুণা আজ বিশ্বের দরবারে স্বীকৃত। তিনি ১৯৭৯ সালে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পান। এই পুরস্কারের অর্থ তিনি আর্তদের সেবায় উৎসর্গ করেছেন। নোবেল পুরস্কার ছাড়াও ১৯৬২-তে ‘পদ্মশ্রী',
পুরস্কার ও স্বীকৃতি : - ১৯৭২-এ ‘নেহেরু’ পুরস্কার ও ১৯৮০-তে ভারত সরকারের ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন। বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি তিনি পেয়েছেন।
চরিত্র মাহাত্ব্য: - টেরেজার কাছে জীবসেবাই শিব সেবা। আর্ত মানুষকে সেবার মধ্যেই তিনি পেয়েছেন তাঁর ঈশ্বরকে। তিনি খ্রিস্টান ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হলেও সমস্ত জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে। তিনি জোর করে কাউকে ধর্মান্তরিত করেন নি। স্নেহময়ী জননীর চরিত্র মাহাত্ম্য স্বরূপ তাঁর অন্তরে। এমন নিঃস্বার্থ সেবা, এমন অক্লান্ত কর্মপ্রচেষ্টা, অখণ্ড আত্মবিশ্বাস, ঐকান্তিক ভক্তি, অথচ শিশুর মতো সহজ সরলতা মানব ইতিহাসে খুব কমই দেখা গেছে।
উপসংহার: - রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতায় আছে—শ্রাবস্তীপুর নগরে যখন দুর্ভিক্ষের কালো ছায়া নেমে এসেছে; এক মুঠো অন্নের জন্য যখন বুকফাটা কান্না তখন তথাগত বুদ্ধ তার শিষ্যদের ডেকে আদেশ দিলেন—“তোমাদের কাউকে দুর্ভিক্ষ পীড়িত এই নগরবাসীদের অন্ন যোগাবার ভার নিতে হবে। ক্ষুধার্তের এই ক্রন্দন আমি আর সহ্য করতে পারছি না।” সে সময় সমবেত শিষ্যদের মধ্যে একাধিক ধনাঢ্য প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলেও কেউই তাঁর আহ্বানে এগিয়ে এলেন না; একমাত্র এগিয়ে এলেন অনাথপিণ্ডদের মেয়ে সুপ্রিয়া। সবাই তখন বিস্মিত হয়ে সুপ্রিয়াকে প্রশ্ন করলেন—‘কোথায় তোমার অন্নভাণ্ডার'? মধুর হেসে সুপ্রিয়া বললেন—‘কেন? তোমাদেরই ঘরে-ঘরে। তোমাদের ভিক্ষার দানেই আমি আমার ভাঙার পূর্ণ রাখব।' সুপ্রিয়া সেইমতো ভিক্ষালব্ধ অন্নে ক্ষুধার্ত শ্রাবস্তীপুরের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। আর মা টেরেজা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন—শুধু ক্ষুধার্তের নয়—বিশ্বব্যাপী তাবৎ আর্তজনের সেবায়। নিবেদিতাকে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'লোকমাতা', মা টেরেজাকে আমরা মুক্তকণ্ঠে বলতে পারি ‘মহীয়সী লোকমাতা'—যিনি জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল অসহায় মানুষের কাছে আশার আলো দেখিয়েছেন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রবন্ধ রচনা। Satyendra Nath Bose Probondho Rochona। সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবনী রচনা।
বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু । বিজ্ঞান চর্চায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান
ভূমিকা: - বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যানের প্রবর্তক বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১লা জানুয়ারি, ১৮৯৪) ভারতীয় বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্থায়ী স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। এই বিজ্ঞানসাধক শুধু বাঙালির গর্ব নয়, সারা ভারতের গর্ব। বিজ্ঞানের নব নব দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, দেশ আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাখায় ভর করে একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে যাচ্ছে, তবুও আমরা এই বিজ্ঞানসাধককে ভুলতে পারিনি, পারবও না।
শিক্ষাজীবন: - পরাধীন ভারতের বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্র বসুর জন্ম কলকাতায়। অসাধারণ মেধাশক্তির অধিকারী, সংগীত, দর্শন এবং সাহিত্যের একনিষ্ঠ অনুরাগী বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন পূর্ণতার সাধক। হিন্দু স্কুলে পড়ার সময় তিনি এক বাৎসরিক পরীক্ষায় ১০০-র মধ্যে পেয়েছিলেন ১১০। গণিতে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি দেখে তৎকালীন প্রবাদপ্রতিম গণিত শিক্ষক উপেন্দ্রনাথ বক্সী বলেছিলেন, সত্যেন একদিন ক্যাশি বা ল্যাপ্লাসের মতো গণিতবিদ হবে। বোস পরিসংখ্যানের সাহায্যে প্লাঙ্কের কোয়ান্টাম মতবাদের ওপর নতুনভাবে খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন (৫ম স্থান)। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজের ছা আলোকপাত করে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষকের ভবিষ্যদ্বাণী সফল করেছিলেন। আই. এস. সি. তে প্রথম হলেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে গণিতে সাম্মানিক সহ স্নাতক হলেন এবং হলেন, শিক্ষক হিসেবে পেলেন জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুরচন্দ্র রায়কে। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্থান পেলেন। মেঘনাদ সাহা তাঁর সতীর্থ ছিলেন, তিনি হলেন দ্বিতীয়। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মিশ্র গণিতে এম. এস. সি. তে প্রথম হলেন। এতেও মেঘনাদ হলেন দ্বিতীয়। তবে এই পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি। কর্মজীবন গণিতের 'লেক্চারার' হিসেবে যোগ দেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি রীডার পদে যোগ দেন।
কর্মজীবন: - ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে স্যার আশুতোষের আমন্ত্রণে বিজ্ঞান কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান ও মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মনোযোগ দিয়ে তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন-'প্লাঙ্কের সূত্র এবং সালোক কোয়ান্টাম প্রকল্প'। প্রবন্ধটির মৌলিকত্বে আইনস্টাইন মুগ্ধ ও বিস্মিত হন। আইনস্টাইন মনে করেছিলেন এই প্রবন্ধ পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সূচনা করবে। শুধু তাই নয়, আইনস্টাইন নিজে এই প্রবন্ধটির অনুবাদ করে জার্মান পত্রিকায় প্রকাশ করেন। এরই ফলশ্রুতি হল – 'বোস আইনস্টাইন পরিসংখ্যান"।
সম্মান ও প্রশংসা : - ১৯২৪–২৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ইউরোপ যাত্রা ও আইনস্টাইনের সান্নিধ্য। এছাড়া জার্মানি ও ফ্রান্সের বহু বিজ্ঞানীর সঙ্গে মত বিনিময় হয়। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে তিনি পদার্থ বিজ্ঞান শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে খয়রা অধ্যাপক পদে যোগ দেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের 'পদ্মবিভূষণ' উপাধি প্রদান এবং ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে কলিকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি পান। ১৯৫৯ থেকে আমৃত্যু (১৯৭৪) তিনি জাতীয় অধ্যাপক রূপে স্বীকৃতি পান। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দেশিকোত্তম উপাধি দান করেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিনের জন্য উপাচার্য নিযুক্ত হন তিনি।
মানুষ সত্যেন্দ্রনাথ ও উপসংহার : - শুধু বিজ্ঞানী হিসেবে নয়, তিনি ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ। বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে সংগীত ও সাহিত্য চর্চাতেও তিনি সময় ব্যয় করতেন। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা স্মরণযোগ্য। এজন্য তিনি 'বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ' প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। এখান থেকে জ্ঞান ও বিজ্ঞান' পত্রিকা প্রকাশ সংকট' গ্রন্থটি এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য। রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'বিশ্বপরিচয়' গ্রন্থখানি করে বিজ্ঞান বিষয়কে জনমানসে প্রচার করেন। তাঁর 'বিজ্ঞানের সত্যেন্দ্রনাথকে উৎসর্গও করেছিলেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন বড়ো মাপের মানুষ। তিনি ছিলেন এক হৃদয়বান, নিরহংকারী, ঋষিতুল্য মানুষ, ছাত্র বৎসলও ছিলেন। সারলা ও মমত্ববোধ ছিল তাঁর সহজাত। আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রথম ও প্রধান পরিচয় বিজ্ঞানী হলেও মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে তাঁর যা অবদান তা বাঙালি চিরকাল মনে রাখবে।
Frequently Asked Questions
1.ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনের কোন দিকটি তার সর্বোচ্চ অবদান হিসেবে গণ্য হয়?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বাংলা গদ্যের উন্নতি এবং সমাজ সংস্কারে। তিনি বিধবা বিবাহ প্রথা চালু করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন এবং মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন।
2. মাদার টেরেসার জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিন।
উত্তর: মাদার টেরেসা, যিনি জন্মেছিলেন ১৯১০ সালে, কলকাতায় দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের সেবা করতেন। তিনি 'নির্মল হৃদয়' নামে সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়াজুড়ে অসংখ্য মানুষকে সাহায্য করেছেন।
3. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিভাবে বাংলা গদ্যের উন্নতি করেছিলেন?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের জনক হিসেবে পরিচিত। তিনি 'বর্ণপরিচয়', 'কথামালা' প্রভৃতি শিক্ষামূলক রচনা লিখে বাংলা সাহিত্যকে নতুন দিশা দিয়েছিলেন।
4. মাদার টেরেসার সেবামূলক কাজগুলির মধ্যে কোনটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য?
উত্তর: মাদার টেরেসার সেবামূলক কাজগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল কলকাতায় 'নির্মল হৃদয়' প্রতিষ্ঠা, যেখানে তিনি মৃত্যুপথযাত্রীদের সেবা করতেন এবং কুষ্ঠাশ্রম, অনাথ আশ্রমসহ বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।
5.ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে কোনটি ছিল তার প্রধান লক্ষ্য?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রধান লক্ষ্য ছিল সমাজের নীচু স্তরের মানুষের জন্য শিক্ষা ও সমতা নিশ্চিত করা। তিনি বিধবা বিবাহ প্রচলন ও নারীশিক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন।
Enter Your Comment