Probondho Rochona : Tomar Jiboner Lokhyo , Ekti Jhorer Rat , Vromoner Ovigyota
বাংলা প্রবন্ধ রচনা। প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম
১. প্রবন্ধের ভূমিকা: প্রবন্ধের শুরুতে বিষয়টি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করতে হবে।
২. মূল অংশের বিন্যাস: প্রবন্ধের মূল অংশে বিষয়বস্তুকে কয়েকটি অনুচ্ছেদে ভাগ করে সুনির্দিষ্ট তথ্য, যুক্তি ও উদাহরণ দিয়ে আলোচনা করা উচিত।
৩. বাক্যের সরলতা: প্রবন্ধে সংক্ষিপ্ত, পরিষ্কার ও প্রাঞ্জল ভাষার ব্যবহার করা উচিত যাতে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হয়।
৪. উপসংহার: প্রবন্ধের শেষে সারাংশ তুলে ধরে বিষয়টি সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা বার্তা দিতে হবে।
৫. সঠিক বানান ও ব্যাকরণ: প্রবন্ধে বানান ও ব্যাকরণগত ভুল এড়িয়ে শুদ্ধভাবে লেখার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা ১৫০ শব্দের। ভ্রমণ অভিজ্ঞতা রচনা। একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা।
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা / একটি পাহাড় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
ভূমিকা : - বিপুল বিশ্বের অনেক দেশে ভ্রমণ করেও শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ প্রকাশ করে গেছেন— "বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি!” অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখার আগ্রহ মানুষের চিরকাল। তাই অজানাকে জানার জন্য, অচেনাকে চেনার জন্য মানুষ বেড়াতে যায়। তাই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে মধুর।
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা : - বর্তমান যুগে দৈনন্দিন জীবনে বৈচিত্রাহীন একঘেয়েমিতে মন যখন অবসন্ন হয়ে পড়ে তখনই মানুষ বৈচিত্র্যের আকর্ষণে মনে-প্রাণে উৎসাহ যোগাতে ভ্রমণের তাগিদ অনুভব করে। ভ্রমণের বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভের মধ্যে মনে প্রফুল্লতা আসে, জ্ঞানের ভাণ্ডার পূর্ণ হয়, অপরকে আপন করার মনোবৃত্তি জন্মায়। দীর্ঘদিন সীমিত গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকলে মানুষের মন স্বভাবতই সংকীর্ণতায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভ্রমণের মাধ্যমে সংকীর্ণতা ও মানসিক জড়তা দূর করা যায়। তাই যে কোনো ভ্রমণের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রস্তুতি :- গত গ্রীষ্মে শিলং ভ্রমণের স্মৃতি আজও আমার স্মৃতিপটে অম্লান হয়ে রয়েছে। বাড়ির সকলের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দটা ছিল আলাদা। তাছাড়া শিলং-এর একটা আকর্ষণ ছিল। বাঁ দিকে চলেছে ঢেউ খেলানো পাহাড় আর জঙ্গল। ডানদিকে সবুজ ধানক্ষেত। আর এই দুয়ের মাঝখান দিয়ে ছুটে যাচ্ছে পিচ বাঁধানো চওড়া রাস্তা। নেই বিশাল খাদ। নেই পথের বাঁকে বাঁকে বরফচূড়ার ঝলকানি। নেই পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে ফেনা তুলে উদ্দাম পাহাড়ি নদীর ছুটে চলা। এ যেন সবুজ গ্রাম বাংলার পাশ দিয়ে আস্তে আস্তে পাঁচ হাজার ফুট ওপরে উঠে যাওয়া। সেই আকর্ষণের জন্যই ট্রেনে করে গুয়াহাটি হয়ে শিলং যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
বৃত্তান্ত : - গুয়াহাটি নেমে ট্যাক্সিতে শিলং রওনা হলাম। দূরত্ব ১০৪ কিমি। হিমালয়ের আর কোথাও এত প্রশস্ত রোমান্টিক রাস্তা আছে কিনা সন্দেহ। আর পাঁচটা শহরের চেয়ে ঢের আলাদা এই শহর—কুলু-মানালি-সিমলা-দার্জিলিং সবার চেয়ে। মনে পড়ে গেল, ‘শেষের কবিতা' উপন্যাসের কথা। কেননা এই শিলং-এর রাস্তাতেই ধাক্কা খাচ্ছিল অমিত রায় আর লাবণ্যের মোটরগাড়ি। এই রাস্তাতেই শুরু হয়েছিল শেষের কবিতার সেই রোমান্টিক প্রেম। শিলং-এ পৌঁছে যা দেখলাম তা জন্ম- জন্মান্তরে ভুলতে পারব না। কী না আছে শিলং-এ? আছে অগাধ জল। শহরে ঢোকার বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই চোখ জুড়িয়ে যায় জলের প্রবাহে। রাস্তার দুদিকে বিশাল পাহাড়ি হ্রদ। উমিয়াম লেক। স্থানীয় ভাষায়, বড়াপানি। আছে বোটিংয়ের ব্যবস্থা, হ্রদের ধারে সারাদিন পিকনিকের বন্দোবস্ত। এই বড়াপানি থেকে সারা শহরে জল সরবরাহ করা হয়। মাটির নিচের পাইপলাইন দিয়ে এই বড়াপানির জলই পৌঁছেছে ওয়ার্ডস লেক-এ। সবুজ মখমলের মতো নরম ঘাসে ঢাকা বাগান, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রকমারি সব ফুলের গাছ। তারই মাঝখান দিয়ে এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া হ্রদ। এর নাম ওয়ার্ডস লেক। শহরের ব্যস্ততম এলাকা পুলিশ বাজার থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ। ওয়ার্ডস লেক-এর ছায়াঘেরা রোমান্সেও শেষ হয় না শিলং-এর জলতরঙ্গ। সারা শহর জুড়ে ঝরনা। শহরের একদিকে রয়েছে সুইট ফলস, অন্যদিকে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমেছে জোড়া ঝরনা— বিশপ, বিডন। যেন যমজ ভাই। এক এক সময়ে মনে হয়েছে এই জন্যই কি 'শেষের কবিতা'র অমিত রায়ের অবচেতনে ঢুকে গিয়েছিল জলের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ। প্রেমিকা লাবণ্যকেও একদিন সে বলেছিল, “আমার বাড়ি হবে নদীর এ পারে। আর তোমার বাড়ি ঐ পাড়ে।” গেলাম শিলং পিক-এর। রেলিং বাঁধানো প্রায় সমতল পাহাড়ের চূড়া, শিলং- এর সবচেয়ে উঁচু ভিউ পয়েন্ট। দূরে দেখা যায় শিলং শহর। খেলনার মতো ছোটো ছোটো বাড়ি, ছোটো ছোটো বাগান। তারপর শিলং পিক থেকে নেমে সোজা চলে গেলাম শিলং গলফ্ কোর্সে। যতদূর চোখ যায়, সবুজ ঘাসে ভরা অন্তহীন এক সমুদ্র। তারই মধ্যে ঢেউয়ের ফেনার মতো সাদা জামা পরা বলবয়দের দৌড়। ‘টি'-এর জোরালো আঘাতে নীল আকাশ বেয়ে উড়ে যাচ্ছে বল, একটা উপবৃত্ত তৈরি করে ছিটকে নেমে আসছে মাটির গর্তে। শিলং-এর কাছেই চেরাপুঞ্জি। চেরাপুঞ্জিতে সবসময় বৃষ্টি। সেই সঙ্গে অনুপম ঝরনাগুলি।
কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত এই চেরাপুঞ্জির সম্বন্ধে লিখেছিলেন—
“চেরাপুঞ্জির থেকে একখানা মেঘ ধার দিতে পারো
গোবি সাহারার বুকে।”
উপসংহার : - পরের দিন বাড়ি ফেরার টিকিট কাটা রয়েছে। তাই ফিরতেই হয়। কিন্তু সারা মন ও হৃদয় জুড়ে থেকে যায় শিলং ভ্রমণের স্মৃতি—যা আজও আমাকে উদ্দীপ্ত করে, উল্লসিত করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এত মনোরম প্রকাশ আমাকে আপ্লুত করে রাখে। পাইন গাছের মৃদু দোলার সঙ্গে সঙ্গে গায়ের লোমগুলি সাদা হয়ে যাওয়া, ঝরনার সৌন্দর্য, লেক-এর অপরূপ মাধুর্য আমার স্মৃতিতে চিরকাল সঞিত থাকবে, তা কখনো ভোলা যাবে না। এই ভ্রমণ আমার অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করেছে এই কারণে যে, শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, ঐ জায়গার মানুষ, জল, তাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, আচার-ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছদ, লোক-সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা' উপন্যাসের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সম্বন্ধে আমার জানার কৌতূহল নিবৃত্ত হয়েছে। তাই এই ভ্রমণের স্মৃতি আমার কাছে চির জাগরূক এবং এই অভিজ্ঞতা আমার জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।
একটি ঝড়ের রাত রচনা Class 10। একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা। একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দে
একটি ঝড়ের রাত
ভূমিকা: - রাত কারো কাছে আনন্দের, কারো কাছে তা ভয়ের, আবার কারোর কাছে তা ব্যথা বেদনার। কারণ বিশেষ বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে কোনো কোনো সময় হয়ে ওঠে একান্ত আপনার, আবার তা কখনো হয়ে ওঠে দুঃসহ বেদনার। আমার জীবনে শেক্পিয়রের ‘টেম্পেস্ট’ নয়, একটি ঝড়ের রাত স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘ঝড়' কবিতায় লিখেছেন—
‘ঝড় রুষিয়ে
ধায় ঢুসিয়ে
ফোঁস ফুঁসিয়ে
খুব হুঁশিয়ার।'
সত্যিই, গত বছর অক্টোবর মাসের একটি ঝড়ের রাত আমাকে হুঁশিয়ার করে গেছে।
পটভূমি : - সময়টা ছিল দুর্গাপূজার ঠিক পরে। সন্ধ্যার আগে থেকেই ছিল থম্থমে আবহাওয়া। কালো কাজলের মতো ঘন মেঘ পুঞ্জীভূত হয়েছিল। সন্ধ্যার পর সেই আবহাওয়া ক্রমশ ঘোর হয়ে উঠছিল। এসব দেখে গলা ছেড়ে গান গাইছিলাম—'ছায়া ঘনাইছে বনে বনে, গগনে গগনে ডাকে দেয়া।' সত্যি সত্যিই মেঘ ডাক্ছিল, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। ছুটি বলে পড়ার তাড়া ছিল না। বাড়িতে মামা, মামীমা এসেছেন বলে গল্পে ব্যস্ত ছিলাম। গল্প করে আবার সবাইকে নিয়ে বসলাম লুডো খেলতে। বাবা, কাকারা অফিসের বিভিন্ন কথা আলোচনায় ব্যস্ত। এমন সময়ে ঝিরঝির করে বৃষ্টি নামলো, সঙ্গে অল্প ঝোড়ো হাওয়া। বেশ মজা লাগছিল। মামাকে বললাম গল্প বলতে। মামা আমার প্রিয় ভূতের গল্প জুড়ে দিলেন। মনটা তোলপাড় করে উঠলো। বাইরে ঝড়-বৃষ্টি তখন সবে শুরু হয়েছে, সেই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে মামার বলা ভূতের গল্প আমার অন্তরে বেশ একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করল।
ঝড়ের রাত : - গল্প শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, জানি না। সম্বিৎ ফিরে এল মায়ের ডাকে। মা খেতে ডাকছেন। বাইরে তখন বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। জানালা কপাটের বাইরে তখন শনশন বাতাসের আওয়াজ আছড়ে পড়ছে। সেই অবস্থায় রাতের খাওয়া সারলাম। আকাশের বুক চিরে মাঝে মাঝে নেমে আসছে একটা রুপোলি রেখা—জানালার কাচ দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাতাস ক্রমশ বাড়তে বাড়তে গোঁ গোঁ আওয়াজ করছে। বাইরের গাছপালাগুলো সেই শব্দকে আরো ভয়ংকর করে তুলছে। মাঝে মাঝে বাজের কড়-কড়াৎ শব্দ আমাদের চমকে দিচ্ছে। বিছানায় শুয়ে ঘুম আসছে না। চমকে চমকে উঠছি আর আতঙ্কিত হচ্ছি।
বর্ণনা : - বাইরে যেন দক্ষযজ্ঞ শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড গতিতে ঝড় আছড়ে পড়ছে। উন্মত্ত শিবের জটাজালের মতো বিসর্পিত মেঘ যেন আকাশের সমস্ত প্রাঙ্গণটিকে ছেয়ে ফেলেছে। ঝড়ের গতি ক্রমশ বাড়ছে, সেইসঙ্গে বৃষ্টি। বিদ্যুতের আলোক যেন মহাদেবের ত্রিনয়নের আগুনের মতো ধেয়ে আসছে। অন্যদিকে ঝড়ের তীব্রগতিতে ও গাছপালাদের উন্মত্ত ঝাঁকুনিতে যেন নন্দীভৃঙ্গী আর বীরভদ্রের অস্থির দাপাদাপি গোটা পরিবেশকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। মনে হল জানালা খুলে দেখি, কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। তাহলে ঝড়ের গতিতে সব এলোমেলো হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে গাছ ভেঙে পড়ার শব্দে চমকিত হলাম। কড়কড় শব্দে গাছগুলি মুচড়ে দুমড়ে পড়ছে।
তীব্রতা : - দুর্যোগ ক্রমশ বাড়তে থাকল। সামনের মাঠ বিদ্যুতের আলোয় দেখা যাচ্ছিল—সাদা হয়ে গেছে। সামনের ছোট ছোট কুঁড়ে ঘরের চালগুলি বেশিরভাগই উড়ে যাচ্ছিল। সেই সঙ্গে গোরু-ছাগলের আর্ত চিৎকার দুর্যোগের ঘনঘটাকে বাড়িয়ে তুলছিল। ইলেকট্রিকের খুঁটিগুলি পড়ে গিয়েছে। ঘরের মধ্যে অন্ধকার। মোমবাতির মিটমিট আলো সেই ভয়াল পরিবেশকে আরো ভয়ার্ত করে তুলছিল। এরই মধ্যে জলোচ্ছ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল সামনের নদী থেকে জলের স্রোত যেন কলকল ধ্বনিতে রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
অভিজ্ঞতা : - আমরা ভাইবোনেরা তখন সবাই এক জায়গায় জড়সড় অবস্থায় আতঙ্কের প্রহর গুনছি। মাংসের দোকানে ছাগল বা মুরগিগুলি যেমন তাদের একজন সঙ্গীকে বধ করার সময় জড়সড় হয়ে আতঙ্কিত হয় তেমনি আমরাও মনে করছিলাম বুঝি বা আমাদের ঘর ভেঙে পড়বে, আমরাও হয়তো বাতাসের প্রবাহে কোথায় উড়ে যাবো। মনে পড়ছিল, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'সাজাহান' নাটকের সাজাহানের বন্দীদশায় কয়েদখানায় বসে থেকে বাইরের ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কিভাবে নিজের সাদা চুলগুলি ছিঁড়ে উড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। মনে পড়ল পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের কথা, তারা কি অবস্থায় আছে। এই গভীর রাতে, ঘন অন্ধকারে, প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যে যে মহাপ্রলয়ের কাণ্ড ঘটে চলেছে তাতে প্রকৃতির কাছে আমাদের অসহায়তা মনে করে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল আমাদের।
উপসংহার : - এভাবে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ঘুম যখন ভাঙল, তখন সেই দুর্যোগের রাত যে সকাল উপহার দিয়েছে সে অতি ভয়ঙ্কর। বহু মানুষের কুঁড়ে ঘর উড়ে গিয়েছে, মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে গিয়েছে কত ঘুমন্ত শিশুকে, গোরু-বাছুর, ছাগল-মুরগি ভেসে গেছে জলের তোড়ে। ইলেকট্রিকের তারে লেগে কয়েকজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। মাঠের সবুজ ধানগাছ তখন জলের তলায়। পুকুর আর বিল একাকার হয়ে গিয়েছে। গত রাতের সেই ঝড়ের তাণ্ডবকে স্মরণ করে আমার মনটা বিষাদে ভরে গেল। সেই বিষাদের ছবি আজও আমার স্মৃতিপটে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।
তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা ক্লাস ১০। তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা ক্লাস 9। তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা ক্লাস 8। তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা ক্লাস 7
তোমার জীবনের লক্ষ্য / তোমার জীবনের লক্ষ্য প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা : - ‘হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা', সে যেমন লক্ষ্যভ্রষ্ট, তেমনি একজন লক্ষ্যহীন মানুষও অপূর্ণ। আর এই অপূর্ণতা মানুষকে তার বাঞ্ছিত লক্ষ্যপূরণের পথে পৌঁছে দিতে পারে না। ফলে তার জীবন হয়ে ওঠে বিষময়। তাই আমি আমার জীবনের লক্ষ্য সম্বন্ধে সচেতন। আমি বড়ো হয়ে ডাক্তার হতে চাই। কেননা আমাদের গ্রামে বহু মানুষ সুচিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করে। আর এই লক্ষ্যকে আমি ধ্রুবতারার মতো স্থিরভাবে গ্রহণ করেছি, তার কোনোরকম পরিবর্তন আমি চাই না। যে কোনো মূল্যের বিনিময়ে আমি আমার লক্ষ্যে স্থির থাকতে চাই।
লক্ষ্য গ্রহণের প্রেক্ষাপট : - আলোকাথীকে আলোক পেতে হলে যেমন আলোর উপযোগী সলতে নির্মাণ করতে হয়, তেমনি মানুষকে লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে প্রয়োজন লক্ষ্যে পৌঁছবার পুর্বে যথার্থ মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ। যথার্থ প্রস্তুতির মধ্যেই নিহিত থাকে সাফল্যের চাবিকাঠি। তেমনি আমার এই পেশা নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্ব ছিল প্রাসঙ্গিক। সেই প্রাসঙ্গিক পথ হল—যখন আমি প্রাথমিক স্কুলে পড়ি, তখন আমার জ্ঞাতির এক দাদা যেভাবে সুচিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন, সেই স্মৃতি এখনো আমাকে তাড়া করে। সেই অল্প বয়সে শুধু আমার দাদা নয়, অনেক মানুষকে বিনা চিকিৎসায় কিম্বা হাতুড়ে ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় মরতে হয়েছে। কারণ আমাদের আশপাশ গ্রামে কোনো হাসপাতাল তো ছিলই না, ছিল না কোনো পাশ করা ডাক্তার। সেইসঙ্গে কাঁচা রাস্তায়, বিদ্যুৎহীন গ্রামে রাতে কারোর অসুখ হলে ভগবানের উপর ভরসা করে বসে থাকতে হত। তাই প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আমার মনে একটা লক্ষ্য ছিল যে, বড়ো হয়ে ভালো পড়াশোনা করে ডাক্তার হয়ে আমার গ্রামের মানুষের সেবা করব।লক্ষ্য নির্বাচনের যুক্তি : - আমার বাবার ইচ্ছা ছিল আমি একজন তাঁর মতো ভালো কৃষক হই। তাঁর মতে চাষার ছেলে চাষা হওয়াই ভালো। প্রথমে প্রথমে ভাবতাম, আমাদের দেশ যেহেতু কৃষিপ্রধান তাই কৃষির উন্নতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে দেশ লাভবান হত। কিন্তু তা সত্ত্বেও ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলাম এই কারণে যে, একজন মানুষ শুধু খাদ্যের জন্য বাঁচে না; বাঁচে সুস্বাস্থ্যের কারণে, স্বাস্থ্য চেতনার জন্য। তাই একজন ডাক্তার হলে আমি শুধু চিকিৎসার কাজই করতে পারব না, স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্বন্ধে তথা স্বাস্থ্য চেতনা সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করতে পারব। তাছাড়া আমি ছেলেবেলা থেকেই লক্ষ করেছিলাম, গ্রামের বহু মানুষ পুকুরের জল খায়, বনে-বাদাড়ে, পুকুরপাড়ে বাহা প্রস্রাব করে, পুকুরে গবাদি পশুকে স্নান করায়, কলেরা হলে রোগীর জামাকাপড় পুকুরে কাচে আবার সেই পুকুরের জলই পান করে, সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে যায়, মায়েদের সন্তান প্রসবের জন্য ধাইমাদের সাহায্য নেওয়া হয়, সেজন্য মা হতে গিয়ে বহু মা মারা যান—এসব ঘটনা আমাকে এই লক্ষ্যগ্রহণে বাধ্য করেছে। আবার এও মনে হয়েছে আমার মতো চাষির ছেলে, যাদের বংশে কেউ এমন জীবিকা গ্রহণ করেনি, তার পক্ষে এই ধরনের ব্যয় সাপেক্ষ লক্ষ্য গ্রহণ উচিত হয়েছে কিনা— সে বিষয়ে দ্বন্দ্ব যে উপস্থিত হয়নি তা নয়। তবুও মনের জোর এবং আমার মায়ের প্রেরণা আমাকে এই লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে বলে আমার স্থির বিশ্বাস। আমি জানি, আমার মনের উদ্যম ও ইচ্ছাশক্তিই প্রধান কথা। কারণ “উদ্যোগিনং পুরুষসিংহং মুপৈতি লক্ষ্মী' অর্থাৎ উদ্যোগী পুরুষেরাই লক্ষ্মী লাভ করতে পারে।
গৃহীত কর্মসূচি : - স্বপ্ন দেখা যত সহজ, তাকে বাস্তবে রূপায়িত করা তত কঠিন। স্বপ্নভঙ্গের শিকার আমি হতে চাই না বলেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেবার জন্য আমি দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাই। শুধু তাই নয়, আমি ডাক্তার হয়ে কী কী করতে চাই সে বিষয়ে আমি আমার ইতিকর্তব্য ঠিক করে রেখেছি। যেমন, প্রথমেই আমি আমার গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যচেতনা গড়ে তোলবার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে চাই—যার দ্বারা গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ির লোকেরা সচেতন হতে পারে। সরকারি অর্থে কিম্বা গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় একটি দাতব্য চিকিৎসালয় গড়তে চাই—যেখানে প্রতিদিন মানুষেরা আসবে চিকিৎসার জন্য। যে কোনো সময় যে কোনো ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য ডাকলে আমি চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে ইতস্তত করব না। সুস্থ ও গরীব লোকেদের কাছ থেকে কোনো পয়সা না নিয়ে চিকিৎসা করার ব্রতও গ্রহণ করেছি। গ্রামের মানুষদের যেসব কুসংস্কার আছে, তা দূর করতে বদ্ধপরিকর হব। সর্বোপরি ত্যাগেই সুখ, ভোগেই দুঃখ—ভারতবর্ষের এই শাশ্বত বাণীকে সামনে রেখে আর্তের সেবায় নিয়োজিত করাই হবে আমার জীবনের মূল ব্রত।
উপসংহার : - যে কোনো লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে চাই উদ্যম ও সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি। এই মানসিকতা নিয়ে আমি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকব। কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি যেন সত্যভ্রষ্ট না হই—এই হবে আমার একমাত্র কামনা। আমার স্থির বিশ্বাস আমাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে—এই আশাই আমাকে পথ দেখাবে।
Enter Your Comment